রক্ত কণিকা
রক্তের উপাদান হিসেবে ভাসমান বিভিন্ন কোষকে রক্তকণিকা বলে। এগুলো হিমাটোপয়েসিস প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। অন্যান্য অংশের মতো স্ববিভাজিত হয়ে সৃষ্টি হয় না বলে এদের রক্ত কনিকা বলা হয়।
রক্তের 45% রক্তকণিকার যা রক্তরসের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে।রক্তকণিকা তিন ধরনের
i. এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকা
ii. লিউকোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকা
iii. প্লেইটলেট বা থ্রম্বোসাইট বা অনুচক্রিকা
★ এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকা বা হিমাটিড
মানুষের রক্ত রসের মধ্যে ভাসমান গোল দ্বি অবতল চাকতির মত নিউক্লিয়াস বিহীন কিন্তু অক্সিজেন বাহী হিমোগ্লোবিন যুক্ত লাল বর্ণের কণিকাকে লোহিত রক্তকণিকা বলে।
১. সংখ্যা :
▪️ প্রতি mLরক্তে ভ্রুনদেহে ৮০-৯০ লাখ, শিশুদেহে ৬০-৭০ লাখ, পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষের ৫০-৫৪ লাখ, পূর্ণবয়ষ্ক স্ত্রীদেহে ৪৪-৪৯ লাখ।
▪️ 50 লাখের চেয়ে 25 শতাংশ কম হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে রক্তের এই অবস্থাকে অলিগোসাইথেমিয়া বলে।
▪️ 65 লাখ এর বেশি হলে তাকে পলিসাইথেমিয়া বলে। কলেরা, উদারময় এসব রোগ হলে হয়।
২. আকৃতি : গড় ব্যাস ৭.৩ μm ও গড় স্থুলতা ২.২ μm এবং কিনারা অপেক্ষা মধ্যভাগ অনেক পাতলা।
৩. উৎপওি ও ধ্বংস :
▪️মানব ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ে কুসুম থলিতে, মাধ্যমিক পর্যায়ে যকৃত, প্লিহা, থাইমাস এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকে পার্শ্বকা, স্টানাম,সুরেতে ও শ্রেণি চক্রের মধ্যে লাল অস্থিমজ্জায় অবস্থিত বড় নিযুক্ত এরিথ্রব্লাস্ট নামক স্টেমকোষ বা হিমোসাইটোব্লাস্ট কোষ থেকে অবিরাম লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি হয়।
▪️ গড় আয়ু বা জীবনকাল প্রায় চার মাস বা 120 দিন।
▪️ মানুষের প্রতি mL লোহিত রক্তকণিকায় প্রায় 270 - 280 মিলিয়ন হিমোগ্লোবিন থাকে আর সুস্থ দেহে প্রতি 100 মিলিমিটার রক্তে 15 থেকে 16 গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে।
▪️ কণিকাগুলোর যকৃত অস্থিমজ্জা ও প্লীহায় অবস্থিত বড় ম্যাক্রোফেজ নামক কোষে ভক্ষিত ও বিশ্লেষিত হয়। ম্যাক্রোফেজ কোষের অবস্থানের কারণে যকৃত ও প্লিহাকে RBC এর কবরস্থান বলা হয়।
▪️ লৌহ অংশ ফেরিটিন হিসেবে যকৃত এ জমা থেকে নতুন লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু লঞ্চগুলো বিলিরুবিন নামক পিত্ত রঞ্জক এ রূপান্তরিত হয় এবং পিত্তরসের সাথে রেচন প্রক্রিয়া দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়।
৫. উপাদান :
▪️ একটি লোহিত রক্তকণিকার ওজনের 33% হিমোগ্লোবিন থাকে।কঠিন পদার্থের মধ্যে 90 শতাংশ হিমোগ্লোবিন।
▪️ প্রতি 100 মিলিলিটার রক্তে 16 গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। লোহিত রক্ত কণিকায় বিদ্যামান লৌহের পরিমাণ 2.5 গ্রাম যা মোট লৌহের 65 শতাংশ।
▪️একটি RBC তে ২৯ পিকোগ্রাম হিমোগ্লোবিন অনু থাকে।
▪️একটি হিমোগ্লোবিন অনু চারটি অক্সিজেন অনুর সাথে যুক্ত হতে পারে।
৬. হেমাটোক্রিট :
▪️ রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার আয়তন পরিমাপের শতকরা হিসেবকে হেমাটোক্রিট বলে।
▪️ পুরুষের রক্তের প্রয়োজন 45% এবং স্ত্রীর রক্ত 40% থাকে।
৭. কাজ :
▪️ অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে।
▪️ রক্তের ঘনত্ব ও সান্দ্রতা রক্ষা করে
▪️বাফার হিসেবে অম্ল ক্ষার সমতা রক্ষা করে
▪️ প্লাজমা ঝিল্লির উপস্থিত অ্যান্টিজেন ব্লাড গ্রুপিং এর জন্য দায়ী রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন নামক কনিকা উৎপন্ন করে
▪️ হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন করে যা রক্তনালীর সংকোচন করতে সাহায্য করে।
৮ বিশেষ তথ্য :
▪️ নিউক্লিয়াস,RNA,গলগী বডি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইট্রোকন্ডিয়া লোহিত রক্ত কণিকা থাকেনা।
▪️অস্থিম্জ্জায় নিউক্লিয়াস যুক্ত রক্তকণিকাকে এরিথ্রব্লাস্ট বলে।
★ শ্বেত রক্ত কনিকা বা লিউকোসাইট
১. উৎস
অস্থি মজ্জার হিমাটোপয়েসিস মাতৃকোষ ও প্লিহা থেকে লিউকোসাইট উৎপন্ন হয়।
২. বৈশিষ্ট্য
পরিণত শ্বেত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিন বিহীন ও অনিয়ত, নিউক্লিয়াস যুক্ত।
৩. সংখ্যা
▪️ নবজাতকের প্রতি মিলিলিটার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা ৯০০০-৩০০০০।
▪️ দুই বছরের কম বয়সীদের দেহে ৬২০০-১৭০০০।
▪️ বছরের বেশি ও পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে ৪০০০-১১০০০।
▪️পরিণত সুস্থ মানুষের রক্ত মাত্র 1% শ্বেত রক্ত কণিকা।
▪️ লোহিত রক্তকণিকা শ্বেত রক্ত কণিকার অনুপাত ৭০০:১
৪. অস্বাভাবিকতা
▪️ রক্তে শ্বেতকণিকা সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক হলে তাকে লিউকোসাইটোসিস।
▪️ বলে রক্তের শ্বেত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে তাকে লিউকোপেনিয়া বলে।
▪️শ্বেত রক্তকনিকার ক্যান্সারকে লিউকোমিয়া বলে। তখন শ্বেত রক্তকণিকা অত্যাধিক হারে বেড়ে যায়।
৫. কাজ
▪️ মনোসাইট ও নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে। মানোসাইটকে Rubbish collecting বলে।
▪️লিম্ফোসাইট এন্টিবডি সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ করে তাই এদেরকে আণুবীক্ষণিক সৈনিক বলে।
▪️ নীল বর্ণের বেসোফিল হেপারিন তৈরি করে যা রক্তনালীতে রক্ত জমাট রোধ করে এবং হিস্টামিন ক্ষরণ করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জীবাণু ধ্বংস করে।
▪️ নিউট্রোফিলের বিষাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।
▪️লাল বর্ণের ইউসিনোফিল এ রক্ত প্রবেশকৃত কৃমির লার্ভা ও এলার্জি ধ্বংস করে।
▪️শ্বেত রক্তকণিকা ট্রিফোন সংশ্লেষ করে।
★ অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট
১.বৈশিষ্ট্য
▪️ ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা, দেখতে গোল, ডিম্বাকার রডের মত, কিন্তু দানাদার কিন্তু নিউক্লিয়াস বিহীন।
▪️প্লীহা ব্যাতীত অন্য কোথাও অনুচক্রিকা সঞ্চিত হয় না
▪️ আয়ুকাল 5- 9 দিন। ধ্বংস প্রাপ্তি ঘটে যকৃত ও প্লীহার ম্যাক্রোফেজের মাধ্যমে।
২.সংখ্যা
▪️প্রতি mL রক্তে প্রায় ১৫০০০০-৩০০০০০ অনুচক্রিকা থাকতে পারে
▪️ প্রতিদিন প্রায় 200 বিলিয়ন অণুচক্রিকা উৎপন্ন হয়।
৩. অস্বাভাবিকতা
▪️ রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক থাকলে তাকে থ্রম্বোসাইটোসিস বলে।
▪️রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিক অপেক্ষা কম হলে তাকে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলে।
৪.উপাদান
▪️প্রধান রাসায়নিক উপাদান প্রোটিন ও সেফালিন নামক ফসফোলিপিড।
▪️সংকোচনে সহায়ক অ্যাকটিন, মায়োসিন ও থ্রোম্বোস্হেনিন প্রোটিন।
▪️ বিভিন্ন এনজাইম ও বিপুল পরিমাণ ক্যালসিয়াম আয়ন সংশ্লেষনের জন্য এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও গলজিবস্তুুর অংশ।
▪️ATP ও ADP উৎপন্নের জন্য মাইটোকন্ড্রিয়া ।
▪️ ক্ষতিগ্রস্ত বাহিকার প্রাচীর নির্মাণ ও ফাইব্রোব্লাস্টের জন্য বৃদ্ধি ফ্যাক্টর।
৫.কাজ
▪️ ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চন এর জন্য প্রয়োজনীয় থ্রম্বোকাইনেজ এনজাইম সৃষ্টি করে এবং হিমোস্ট্যাটিক প্লাগ গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
▪️ রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্থ এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনর্গঠন করে
▪️ সেরোটোনিন ক্ষরণ করে তা রক্তনালীর সংগঠন সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত হ্রাস করে।
▪️ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে কার্বন কণা, ইমিউন কমপ্লেক্স ও ভাইরাসকে ভক্ষন করে।
▪️হিস্টামিন ও 5- Hydroxytryptamine (সেরাটনিন) সঞ্চয় করে।
0
0
0
Post a Comment