তরঙ্গের বিস্তার লাভের ক্ষেত্রে হাইগেনস নীতি একটি নীতি প্রদান করেন , যা আলোর সরলরৈখিক গতি, প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও অপবর্তন ব্যাখ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নীতি যেমন স্থিতিস্থাপক তরঙ্গের বেলায় যেমন খাটে, তেমনি তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের বেলায় খাটবে। তরঙ্গস্থিত সমদশা সম্পন্ন কণাগুলোর সঞ্চারপথ কে তরঙ্গমুখ বলে।
তরঙ্গমুখ দুই ধরনের :-
১. সমতলীয় তরঙ্গমুখ
২. গোলীয় তরঙ্গমুখ
হাইগেনের নীতি একটি জ্যামিতিক ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। একটি তরঙ্গমুখের বর্তমান অবস্থা জানা থাকলে পরবর্তী যেকোনো সময় ঐ তরঙ্গমুখের অবস্থান কোথায় হবে তা আমরা জানতে পারি হাইগেনেসের এ নীতি থেকে। তরঙ্গ বিস্তারের এ নীতি নিম্নোক্তভাবে বিবৃত করা হয়:-
একটি তরঙ্গমুখের উপরস্থ সকল বিন্দু এক একটি বিন্দু উৎস হিসেবে ক্রীয়া করলে, তা গৌণ তরঙ্গ হিসেবে উৎপন্ন হয়ে মূল তরঙ্গের দ্রুতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। পরবর্তী যে কোন মুহূর্তে গৌন তরঙ্গমুখ গুলোর সাধারণ স্পর্শক হবে ওই সময় উক্ত তরঙ্গমুখের নতুন অবস্থান।
ধরা যাক,
AB একটি সমতল অথবা গোলীয় তরঙ্গমুখ বাম থেকে ডান দিকে অগ্রসর হলে। হাইগেনসের নীতি অনুসারে এর উপরস্থ সব বিন্দু গৌন তরঙ্গের উৎস হিসেবে ক্রীয়া করবে অর্থাৎ প্রতিটি বিন্দু থেকে গৌন তরঙ্গ উৎপন্ন হবে। তরঙ্গের দ্রুতি v হলে প্রতিটি বিন্দু থেকে উৎপন্ন গৌন তরঙ্গের মুখ t সময়ে সামনের দিকে vt দূরত্ব অতিক্রম করবে। এখন,vt ব্যাসার্ধ নিয়ে AB এর উপরস্থ প্রতিটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে একটি করে বৃওচাপ অঙ্কন করা হলে বৃওচাপগুলো t সময় পর গৌন তরঙ্গগুলোর তরঙ্গমুখ নির্দেশ করবে।এ বৃওচাপগুলো সাধারন স্পর্শক A'B' হবে ঐ সময় তরঙ্গমুখের নতুন অবস্থান।
আমাদের এই মহাবিশ্বের সকল আলোক উৎস গোলীয় তরঙ্গমুখ কিন্তু এই তরঙ্গ মুখ সমতলীয় তরঙ্গ মুখে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায় যেমন :-
একটি বাল্বের আলোকে কোন চিরের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করালে গোলীয় তরঙ্গমুখকে সমতলীয় তরঙ্গমুখে পরিণত করা যায়।
ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন ছিলেন একজন প্রথিতযশা ডাচ গণিতবিদ ও প্রাকৃতিক দার্শনিক তিনি জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ, সম্ভাব্যবিদ এবং ঘড়ি নির্মাতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। হাইগেন তার সময়কার একজন নেতৃত্ব স্থানীয় প্রাকৃতিক দার্শনিক। তার কাজের মধ্যে রয়েছে টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনির বলয় সমূহ পর্যবেক্ষণ এবং শনির উপগ্রহ টাইটান আবিষ্কার। তিনি বলবিদ্যা ও আলোকবিদ্যার বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ করেন।
Post a Comment